মধ্যযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মুসলমান কবি আলাওল । এবং সপ্তদশ শতাব্দীর আরাকান রাজসভার দ্বিতীয় কবি হলেন সৈয়দ আলাওল। ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগে চট্টগ্রামে (বর্তমান
মধ্যযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মুসলমান কবিসৈয়দ আলাওল । এবং সপ্তদশ শতাব্দীর আরাকান রাজসভার দ্বিতীয় কবি হলেন সৈয়দ আলাওল
■ সৈয়দ আলাওল ■
মধ্যযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মুসলমান কবি আলাওল । এবং সপ্তদশ শতাব্দীর আরাকান রাজসভার দ্বিতীয় কবি হলেন সৈয়দ আলাওল। ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগে চট্টগ্রামে (বর্তমান বাংলাদেশ)আলাওল জন্মগ্রহণ করেন । এবংআলাওলের মৃত্যু হয় ১৬৭৩ খ্রিস্টাব্দে। তাহার পিতা আলাওলের পিতা ফতেহাবাদের মজলিস কুতুবের মন্ত্রী ছিলেন।
আলাওল তাঁর কর্মজীবন কোথায় শুরু করেন মগরাজের সেনাবাহিনীতে চাকরি দিয়ে। রাজা সুধর্মা আলাওলের সময় আরাকানের রাজা ছিলেন।আরাকান রাজ সুধর্মা ও রাজমন্ত্রী মান ঠাকুরের নির্দেশে আলাওল তাঁর কাব্যগুলি রচনা শুরু করেন।
আলাওলের গ্রন্থগুলি কী ধরনের রচনা বলতে গেলে বলতে হয় আলাওলের সবগুলি গ্রন্থ অনুবাদমূলক, মৌলিক সৃষ্টি নয়। আরবি ও ফারসি থেকে অনূদিত চারটি গ্রন্থ এবং হিন্দি থেকে অনূদিত একটি।
সৈয়দ আলাওল রচিত কাব্যগুলির নাম ছিল- সয়ফুলমুলক বদিউজ্জমাল (১৬৫৮-৬০),'সেকেন্দার নামা' (১৬৬৩), 'পদ্মাবতী' (১৬৪৬)। কবি আলাওলের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ টি ছিল- 'পদ্মাবতী' (১৬৪৬)। 'পদ্মাবতী' কাব্যটি রচিত মুহম্মদ জায়সীর 'পদুমাবৎ' নামক কাব্যের অনুবাদ অবলম্বনে।
'পদ্মাবতী' কাব্যরচনার উদ্দেশ্য ছিল - ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে মানুষের প্রেম ভালোবাসা ও আত্মত্যাগের কাহিনি কারা রচনা করা।'পদ্মাবতী' ইতিহাসাশ্রিত রোমান্টিক প্রেমকাব্য ।পদ্মাবতী কাব্যের প্রধান চরিত্র গুলি- রত্নসেন, নাগমতি, পদ্মাবর্তী, আলাউদ্দিন খিলজি।
'পদ্মাবতী' কাব্যের মূল কাহিনিটি সংক্ষেপে লেখো ?
সিংহল রাজকন্যা ও মেবারের রানি পদ্মাবর্তী বা পদ্মিনীকে নিয়ে এই কাব্যটি রচিত। আলাউদ্দিন খিলজি রত্নসেনের রানি পদ্মিনীর রূপে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে শক্তিবলে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য চিতোর আক্রমণ করেন। এই দস্যুর কবল থেকে সতীত্বধর্ম রক্ষার্থে পদ্মিনী জহরব্রতে আত্মত্যাগ করেন।মূল কাবো (জায়সির পদুমাবৎ) ইতিহাসের চেয়ে কল্পনার প্রাধান্য বেশি, তা ছাড়া জায়সি সুািধক ছিলেন বলেই উক্ত ঐতিহাসিক কাহিনিকে জীবাত্মা-পরমাত্মার রূপ হিসেবেই গ্রহণ করেছেন।
আলাওলের 'পদ্মাবতী' কাব্যের গুরুত্ব বলতে গিয়ে বলতে হয়- এই কাব্যে ধর্মসংস্কার মুক্ত মর্ত্যা মানব-মানবীর প্রেম-ভালোবাসা ও আশা-আকাঙ্ক্ষার ভাবলোক সৃষ্টি হয়েছে।
আলাওলের আরেক টি কাব্যা 'সয়ফুলমুলক বদিউজ্জমাল' গ্রন্থটির সংক্ষিপ্ত আলোচনা করতে গিয়ে বলা যায় সপ্তদশ শতাব্দীর মুসলমান কবি সৈয়দ আলাওলের রচনা। ইসলামীয় রোমান্টিক কাহিনি অবলম্বনে।নায়ক সয়ফুলমূলক ও নায়িকা বিদয়উজ্জমালের প্রেমকাহিনি এর বিষয়বস্তু। এই কাব্যটি মুসলিম সমাজে খুবই জনপ্রিয়। মানব নায়কের সঙ্গে পরী প্রেমিকার মিলন কাহিনি লিখে আলাওল মানবলোক ও স্বপ্নলোকের মধ্যে সেতুবন্ধ রচনা করেছিলেন। এই কাব্যের লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য স্বপ্নমেদুর লোকাতীত পরিবেশ সৃষ্টি।
সৈয়দ আলাওল। 'হপ্তপাকর (১৬৬৫ খ্রি:)-এ আরবের রাজকুমার বাহরামের যুদ্ধজয় ও সপ্তপরীর গল্প বর্ণিত হয়েছে। ইরানীয় কবি নেজামি সমরখন্দের 'সপ্ত পয়কর' গ্রন্থের আখ্যানই এর আশ্রয়। আলাওলের 'তোহফা' (১৬৬৩-৬৪ খ্রিঃ) নীতিশাস্ত্র বিষয়ক গ্রন্থ। ফারসি নীতিকাব্য 'তুহফাতুন্নেসা' গ্রন্থে অনুবাদমূলক রচনা।
সেকেন্দার নামা' গ্রন্থটি কার রচনা ? উৎস কী ? সংক্ষিপ্ত গ্রন্থ পরিচয় দাও।
সৈয়দ আলাওলের রচনা। উৎস- নেজামি সমরখন্দের ফারসি কাব্য 'ইসকান্দার নামা'র সরস অনুবাদ। গ্রিক সম্রাট আলেকজান্ডারের সমরাভিযান ইসলামীয় কায়দায় এখানে বর্ণিত ৷ এই গ্রন্থে ব্যাপক যুদ্ধবিগ্রহ ও রূপকথাধর্মী অনেক অদ্ভুত গল্প স্থান পেয়েছে। সেগুলি চিত্তাকর্ষক হলেও কাবাগুণের দিক থেকে নগণ্য।
আলাওলের কবিপ্রতিভার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
আলাওল জীবনরসিক কবি। তিনি বহুভাষাবিদ ও শাস্ত্রজ্ঞ সুপণ্ডিত কবি ছিলেন বলেই বহুপাত্র থেকে জীবনের রস আহরণ করেছেন। তাঁর প্রতিভার ব্যাপকতা স্বীকার্য। হিন্দু ও মুসলমান জ্ঞানে তিনি সমান পারদর্শী ছিলেন। আলাগুলের রচনা সরল অথচ প্রগাঢ়। 'পদ্মাবতী' তাঁর শ্রেষ্ঠ আখ্যায়িকা। আলাওলের কাব্যমালায় মাঝে মাঝে গান বা পদাবলি আছে। এগুলির কোনো কোনোটিতে তাঁর রচনাশক্তির বিশিষ্ট পরিচয় পাই।
COMMENTS